আবার আসিব ফির

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - সাহিত্য কণিকা (বাংলা) - কবিতা | | NCTB BOOK

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় 

হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে; 

হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে 

কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়; 

হয়তো বা হাঁস হবো— কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, 

সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে; 

আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে 

জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়,

 

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে, 

হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে, 

হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে; 

রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে 

ডিঙা বায়; – রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে 

দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে –

Content added || updated By

শব্দার্থ ও টীকা

ধানসিড়ি — ঝালকাঠি জেলার একটি নদী। নদীটি এখন মরে গেছে।

শঙ্খচিল — এক ধরনের সাদা চিল।

নবান্ন — নতুন ধানকাটার পর আমাদের দেশে এ উৎসব হয়। এ উৎসবে দুধ, গুড়, নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়া হয়।

কার্তিকের নবান্নের দেশে — কবি নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নবান্নের দেশ বলেছেন। নবান্ন অর্থ নতুন ভাত। কার্তিক মাসে ঘরে নতুন ধান তুলে কৃষকেরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে।

ঘুঙুর — নূপুর, পায়ের অলংকার।

জলাঙ্গী — কবি এখানে নদীকে জলাঙ্গী (অর্থাৎ জল যার অঙ্গে) নামে অভিহিত করেছেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে কবি জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা বলেছেন।

ডাঙা — জলাশয়ের নিকটবর্তী উঁচু স্থান।

সুদর্শন — শকুনি।

লক্ষ্মীপেঁচা — এক ধরনের পেঁচা।

রূপসা – একটি নদীর নাম

ডিঙা — ছোট নৌকা।

নীড়ে — পাখির বাসায়।

ধবল — সাদা।

Content added || updated By

পাঠের উদ্দেশ্য

কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীরা বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবে। তাদের মনে নিজের দেশের প্রতি মমত্ববোধের জাগরণ ঘটবে।

Content added || updated By

পাঠ-পরিচিতি

‘আবার আসিব ফিরে' কবিতাটি কবির ‘রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। জন্মভূমির অত্যন্ত তুচ্ছ জিনিস কবির দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পরেছে কবিতায়। কবি মনে করেন, যখন তাঁর মৃত্যু হবে তখন দেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন। আবার কখনও বা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যাবেন। এমনও হতে পারে, তিনি হাঁস হয়ে সারাদিন কলমির গন্ধে ভরা বিলের পানিতে ভেসে বেড়াবেন। এমনকি দিনের শেষে যে সাদা বকের দল মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসে তাদের মাঝেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এভাবে তিনি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন। 

Content added || updated By

কবি-পরিচিতি

কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু হয় এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে কলকাতা সিটি কলেজ, দিল্লি রামযশ কলেজ, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ, খড়গপুর কলেজ, বরিষা কলেজ ও হাওড়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। এক সময় তিনি সাংবাদিকতার পেশাও অবলম্বন করেছিলেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রং ও রূপের বৈচিত্র প্রকাশ ঘটেছে। অনেক অজানা গাছ, পশু-পাখি ও লতাপাতা তাঁর কবিতায় নতুন পরিচয়ে ধরা পড়েছে। প্রকৃতিপ্রেমিক এই কবি প্রকৃতি থেকেই তাঁর কবিতার রূপরস সংগ্রহ করেছেন। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ১৯৫৪ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

Content added By

কৰ্ম-অনুশীলন

ক. কবিতাটির দৃশ্যচিত্র অবলম্বনে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন কর (শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর অংশ গ্রহণে)। 

খ. ‘আবার আসিব ফিরে' কবিতাটি অবলম্বনে একক ও দলগত আবৃত্তির আয়োজন কর।

Content added || updated By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content

সৃজনশীল প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion